মে মাসে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) থেকে সর্বমোট রোজগারের পরিমাণ ১১.৫% বেড়ে হয়েছে ১.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও বিগত ছয় মাসের মধ্যে, এটি সবচেয়ে ধীর গতির বৃদ্ধি হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে। এপ্রিলের ইনফ্লোর তুলনায় কালেকশনের পরিমাণ ১৬% কম। তবে বৃহত্তর ছবিটা বুঝতে হবে। এপ্রিলে রেভেনিউর পরিমাণ ছিল ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা। বছর শেষের আর্থিক বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত নিয়মাবলীর কারণে এই অর্জন সম্ভব হয়েছিল। চলতি আর্থিক বর্ষের প্রথম মাস, এপ্রিলে যে সব লেনদেন হয়েছিল, সেই তুলনায় মে মাসের যে কালেকশন গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবুও এর মধ্যে একটা ইতিবাচক ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। একটানা ১৫ মাস ধরে জিএসটি থেকে রোজগারের পরিমাণ ১.৪ লক্ষ কোটির ঘরে ছিল। মে মাসের রেভেনিউ থেকে দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র ষষ্ঠবারের জন্য জিএসটি বাবদ রোজগার ১.৫ লক্ষ কোটির গণ্ডি ছাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের চারবার এই নজির দেখা গিয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, এপ্রিলে যে তেজীভাব দেখা গিয়েছিল, তা সত্ত্বেও অক্টোবর ২০২২ এবং মে ২০২৩-এর মধ্যে প্রতি মাসের গড় রোজগারের পরিমাণ হয়েছে ১.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা (এপ্রিলের হিসাব যোগ করলে, ১.৫৭ লক্ষ কোটিরও বেশি)। খুচরা ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ এপ্রিল মাসে ৪.৭% হ্রাস পেলেও এবং পাইকারি মূল্য কমলেও রেভেনিউর অবস্থান বদল হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, যদি মূল্যবৃদ্ধি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে, তাহলে গত বছরের থেকে কিছুটা ম্লান মনে হলেও জিএসটি খাতে এবারের ১০%-১২% বৃদ্ধি খুব একটা খারাপ নয়।
মে মাসের প্রাথমিক অর্থনৈতিক ডেটা থেকে গতি বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল পার্চেজিং ম্যানেজারের ইনডেক্সের (পিএমআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের পর এই প্রথম উৎপাদনকারীদের সময় সবচেয়ে অনুকূল হয়ে উঠেছে। দুই মাসের মন্দা কাটিয়ে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। কিছু সেগমেন্টে নিম্ন বেস বাদ দিলে, বাকি ক্ষেত্রে হোলসেল অটো সেলসের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া নিয়ম মান্যতা এবং কনজাম্পশন সংক্রান্ত পরিস্থিতির জেরে আগামী মাসগুলোতে রেভেনিউর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। জুলাই মাসে, জিএসটি ব্যবস্থার ছয় বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, রেভেনিউ ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে আইন এড়িয়ে যাওয়া এবং ভুয়ো রেজিস্ট্রেশনের মোকাবিলা করার জন্য দুই মাসের বিশেষ অভিযান চালাবে। উচ্চতর রেভেনিউর প্রভাব সম্পন্ন কেসগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করার জন্য একটি নতুন রিটার্ন স্ক্রুটিনি সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আগস্ট মাস থেকে, যে সব ফার্মের বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকার বেশি, তাদের ক্ষেত্রে ই-ইনভয়েসিং বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতে ট্যাক্স ব্যবস্থার মধ্যে কোনো সম্ভাব্য ঘাটতি থেকে থাকলে, তার মোকাবিলা করা যাবে। এছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে, যাদের কাছে এই নোট রয়েছে, তারা এগুলো আরও বেশি করে খরচা করতে পারেন। এতেও রেভেনিউ বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি প্রতি মাসে জিএসটি বাবদ প্রায় ১.৫৫ লক্ষ কোটির রোজগার একটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়, তাহলে সরকারের উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নীতি-স্তরে থাকা অসঙ্গতি সংশোধন করার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করা। ট্যাক্স ব্যবস্থায় এখনও এই খামতি রয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মতো পরিস্থিতি থাকলেও, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যা করা যায়, জিএসটি কাউন্সিলের অবশ্যই তা করা উচিত। এই পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে ট্রাইবুনাল সেট আপ করা, গেমিং এবং ক্যাসিনো লেভির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া এবং অস্পষ্ট অবস্থায় থাকা রেট সংক্রান্ত পরিকাঠামো সংশোধন করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা।